শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি (সিলেট) সংবাদদাতা: দেশের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ (কেমুসাস)-এর দশম বইমেলা শুরু হয়েছে। সোমবার বিকেল চারটায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্য দেন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিন। এর আগে লেখক-পাঠক ও বইপ্রেমী মানুষের সরব উপস্থিতে ফিতা কেটে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কেমুসাসের সাবেক সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ শুধু দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানই নয়, মননশীল মানুষের উর্বর বিচরণ কেন্দ্রও। তিনি বলেন, সিলেটে ছয়টি বিশ^বিদ্যালয় ও চারটি মেডিকেল কলেজ থাকলেও মননশীল পাঠকদের চিন্তার খোরাক জোগানোর মতো কোন লাইব্রেরি গড়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ আলোর দিশারী হিসেবে কাজ করছে।
কেমুসাসের সভাপতি প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে ও বইমেলা উপকমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ মবনুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী, বইমেলা বাস্তবায়ন উপকমিটির আহবায়ক আ ন ম শফিকুল হক, বিশিষ্ট গবেষক আবদুল হামিদ মানিক, কেমুসাসের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী, কেমুসাসের সহ-সভাপতি মোঃ বশিরুদ্দিন ও সেলিম আউয়াল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সালেহ উদ্দিন আরো বলেন, জ্ঞানের রাজ্যে সিলেটবাসীর সময় কাটানোর একটি মনোরম জায়গা হলো কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ। তিনি অভিভাবকদেরকে বিকেল বেলায় তাদের সন্তানদের সাহিত্য সংসদে নিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের প্রধান ক্ষেত্র হলো লাইব্রেরি। তিনি কেমুসাস কর্তৃপক্ষের প্রতি একটি শিশু কর্ণার খোলার আহবান জানান। যে কর্ণারে শিশুতোষ বইয়ের পাশাপাশি খেলার উপকরণও থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষ প্রচুর বই পাঠ করলেও আমাদের দেশে এখনো সেভাবে বইয়ের পাঠক তৈরি হয়নি। অথচ বই পাঠ ছাড়া কোনো দেশের জনগণের মনোজাগতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি সবাইকে ব্যাপক বই পড়ার আহবান জানিয়ে বলেন, বই মানুষের চোখের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, বই মানুষের তৃতীয় নয়ন, জীবনের বন্ধু। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ মানুষকে বই পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি বছর বইমেলার আয়োজন করছে।
কেমুসাসের সাবেক সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কেমুসাস বইমেলা সিলেটবাসীর প্রাণের মেলা। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসাথে জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে কাজ করেন। তিনি বলেন, একুশে বইমেলার পরই কেমুসাস বইমেলা একটি সুসংগঠিত বইমেলা। বিশিষ্ট গবেষক আব্দুল হামিদ মানিক বলেন, যে বিষয় শুরু হয়ে শেষ হয়ে যায়, সেটা ইতিহাস। আর যা শুরু হয়ে চলতে থাকে সেটা ঐতিহ্য। কেমুসাস বইমেলা সিলেটবাসীর ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বইমেলা বাস্তবায়ন উপকমিটির আহবায়ক আ ন ম শফিকুল হক বলেন, দশম কেমুসাস বইমেলা সফল করতে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। তিনি সিলেটবাসী প্রতিদিন বইমেলায় উপস্থিত হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, এ বইমেলার সফলতা সিলেটবাসীর সফলতা। কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী বলেন, এবারে দশম কেমুসাস বইমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে কেমুসাসের সাবেক সভাপতি আমীনূর রশীদ চৌধূরীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। তিনি সবাইকে তাঁর জীবনী পাঠ করার আহবান জানিয়ে মরহুমের সংক্ষিপ্ত জীবনী উপস্থাপন করেন।
সন্ধ্যা ৭টায় বইমেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। কবি মুহিত চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও মামুন হোসেন বিলাল ও ফিদা হাসানের যৌথ উপস্থাপনায় এতে আলোচনায় অংশ নেন কবি আনোয়ার হোসেন মিছবাহ, সৈয়দ মোহাম্মদ তাহের, নাজনীন আক্তার কণা, ইশরাক জাহান জেলী ও বাশিরুল আমিন। লেখা পাঠে অংশগ্রহণ করেন গায়ত্রী রানী রায়, কাজী আল মামুন, কামাল আহমদ, নেসার আহমদ জামাল, সিরাজুল হক, সুফিয়ান আহমদ, মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, সৈয়দ মুক্তদা হামিদ, মিনহাজ হৃদয়, বাহাউদ্দিন বাহার, আকরাম সাবিত, এখলাসুর রহমান, এমএ ওয়াহিদ চৌধুরী, এম আলী হোসাইন ও শাহীন উদ্দিন। এর আগে বিকেল পাঁচটায় বইমেলা মঞ্চে সামশীর হারুনুর রশীদের ‘আদর্শ সংবাদ ও সাংবাদিকতা’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের বইমেলায় ২৯টি প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিয়েছে। এর বাইরে লিটলম্যাগ কর্ণার, কেমুসাসের নিজস্ব স্টল ও বইমেলা তথ্যকেন্দ্র রয়েছে। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবার মেলায় সর্বোচ্চ ৩০% কমিশনে বই বিক্রি করবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ২০ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এ বইমেলা। আজ মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে ক ও খ গ্রুপের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও প্রকাশনা উৎসব।